somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইহতিশাম আহমদ
একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ক্যামেরাপারসন হিসাবে চাকুরীরত। ত্রিকোন চলচ্চিত্র শিক্ষালয় নামে একটি ফিল্ম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক। গল্প, কবিতা লেখা ও অভিনয়ের অভ্যাস রয়েছে।

চলচ্চিত্র র্নিমাণ টিপস-১ সিন ও সিকোয়েন্সের পার্থক্য

১৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[আমার গুরু ক্যামেরাম্যান আব্দুস সামাদ (যিনি স্ট্যাম্পর্ফোড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম ও মিডিয়া ডিপার্টমেন্টর প্রতিষ্ঠাতা, সেই সাথে ইউ.কে. থেকে ফিল্মের উপরে মাস্টার্স করে আসা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাক্তি) বলেছিলেন, “বিদেশ থেকে পড়াশুনা করে এসে অনেকই দেশের মাটিতে ঠিক মত কাজ করতে পারে না। কারণ বিদেশে যা শেখানো হয় তা সব সময় বাংলাদেশের কাজে লাগানো যায় না। এর একটি কারণ আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় না। আরেকটি কারণ হচ্ছে অনেক বিষয়ে কাজ করার আমাদের নিজেস্ব কিছু ধারা রয়েছে। সেই ধারার সাথে যদি তুমি মিশে যেতে না পারো তবে চলচ্চিত্রর মূল স্রোতে কাজ করতে পারবে না।”

এখানে সিন ও সিকোয়েন্সের পার্থক্য বোঝাতে আমি আমাদের প্রচলিত ধারনাটাকে এখানে তুলে ধরেছি। সেই সাথে স্বীকার করে নিচ্ছি যে আর্ন্তজাতিক ভাবে স্বীকৃত ব্যাকরণ সম্মত সংগাটি আমার এই ব্যাখার সম্পূর্ণ বিপরীত। তারপরও আপনাদের কাছে আমি এই দেশের প্রচলিত ধারণাটাকে তুলে ধরছি কারণ আপনারা নাটক বা সিনেমা যা-ই বানান এই দেশেই তো বানাবেন। আর সঠিক সংগাটি গুগল বা উইকিপিডিয়া থেকে সহজেই শিখে নিতে পারবেন।]


চলচ্চিত্র র্নিমানে আগ্রহীদের কাছে সিন এবং সিকোয়েন্স শব্দ দুটি ব্যাপক ভাবে পরিচিত। কিন্তু শব্দ দুটির পার্থক্য হয়ত অনেকেরই জানা নাই। এই অনেকের মাঝে র্দীঘদিন যাবৎ আমিও ছিলাম। প্রথম জীবনে থিয়েটার কর্মী হওয়ায় বিষয়টিকে আমি মঞ্চ নাটকের দৃষ্টিতে বিচার করতাম, যা পুরোপুরি সঠিক ছিল না।

মঞ্চ নাটকে বর্তমানে শুধু দৃশ্যের ব্যবহার থাকলেও অতীতে অঙ্ক বলে আরেকটি বিষয় ছিল। কয়েকটি দৃশ্যের সম্বন্নয়ে একটি অঙ্ক র্নিমিত হত। বিষয়টা অনেকটা এরকম- ধরা যাক, একটি নাটকে মোট ১০টি দৃশ্য আছে। তার মধ্যে প্রথম তিনটি দৃশ্যের ঘটনাবলী রোমান্টিকতা র্নিভর।পরের চারটি দৃশ্য বিচ্ছেদ র্নিভর এবং সব শেষের দৃশ্যগুলোতে রয়েছে ঘটনার পরিনতি বা সমাপ্তি। সুতরাং এখানে অঙ্ক হবে মোট তিনটি। প্রথম ও শেষ অঙ্কের দৃশ্য সংখ্যা তিনটি করে এবং মাঝের অঙ্কের দৃশ্য সংখ্যা চারটি।

মঞ্চ নাটকের এই বিষয়টির সাথে মিল রেখে আমি ভাবতাম মঞ্চ নাটকে যাকে দৃশ্য বা সিন বলা হচ্ছে চলচ্চিত্রে সেটাকে সিকোয়েন্স এবং মঞ্চে যাকে অঙ্ক বলা হচ্ছে চলচ্চিত্রে তাকে দৃশ্য বা সিন বলা হয়ে থাকে। বিষয়টা একেবারেই সঠিক নয়। ইংরাজি শব্দ “সিন” এর বাংলা দৃশ্য হলেও ইংরাজি সিকোয়েন্সের কোন বাংলা প্রতি শব্দ নেই। তাই বিষয়টা অনেকের কাছেই বেশ জটিল হয়েই ধরা দেয়। এখানে মঞ্চ নাটকের বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে বললাম কারণ, অনেকেই থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে চলচ্চিত্রে আসেন। তারাও হয়তবা আমার মত করে ভুল ধারনা করতে পারেন।

যাহোক, সিন এবং সিকোয়েন্স তাহলে কি? বিষয়টাকে আমি এভাবে ব্যাখ্যা করতে চাই- ধরা যাক একটি চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি উপন্যাস। উপন্যাসের এক একটি অধ্যায় হচ্ছে চলচ্চিত্রের এক একটি সিন। আর এক একটি প্যারাগ্রাফ হচ্ছে এক একটি সিকোয়েন্স। আরো গভীরে যদি যেতে চান তবে বলা যায় উপন্যাসের এক একটি লাইন হচ্ছে চলচ্চিত্রের এক একটি শট। আর একটি লাইনের শব্দগুলোকে তুলনা করা যেতে পারে এক একটি ফ্রেমের সাথে। অর্থাৎ, চলচ্চিত্রে কয়েকটি ফ্রেম (শব্দ) মিলে একটি শট (লাইন), কয়েকটি শট মিলে একটি সিকোয়েন্স (প্যারাগ্রাফ), কয়েকটি সিকোয়েন্স মিলে একটি সিন (অধ্যায়) এবং কয়েকটি সিন মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র (উপন্যাস)।

এতো গেল রূপক ব্যাখ্যা। এবার আসি অক্ষরিক ব্যাখ্যায়। সিনের সাথে লোকেশন ও সময়ের সর্ম্পক রয়েছে। আর সিকোয়েন্সের সাথে ভাব বা অনুভুতির গুরত্বের সর্ম্পক রয়েছে। ধরা যাক, নায়ক সকালে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে বাস, রিকশা ইত্যাদি চড়ে অফিসে এসে পৌঁছালো। অফিসের নিয়মিত কাজ শেষ করে সে আবার রাতে বাসায় ফিরে এলো। এখানে বাসা হল দৃশ্য-১, রাস্তা হল দৃশ্য-২, অফিস হল দৃশ্য-৩, এবং সব শেষে আবারও বাসা হল দৃশ্য-৪। এখানে দৃশ্য ১ ও ৪ এর লোকেশন একই থাকলেও সময়ের পরিবর্তন ঘটেছে।

এখন দেখা যাক, দৃশ্য-১ এ বাসায় অফিস যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে নায়ক কি কি করল? প্রথমে ঘুম থেকে উঠে বিছানা গোছালো (সিকোয়েন্স-১), তারপরে বাথরুম সারল (সিকোয়েন্স-২), তারপরে নাস্তা খেল (সিকোয়েন্স-৩), তারপরে কাপড় পরে অফিস যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো (সিকোয়েন্স-৪)। ঘটনাগুলো একই লোকেশনে এবং একই সময়ে ঘটলেও সবগুলো ঘটনা কিন্তু এক নয়। এখানে অভিনয়ের ধরন, পোষাক বা প্রপসের কন্টিনিউটি, আলোর তারতম্য অনেক কিছু বিবেচনায় রাখতে হয়। যেমন, ঘুম থেকে ওঠার সময় নায়কের চুল এবং বিছানা এলোমেলো থাকবে। কিন্তু নাস্তা করার সময় চুল পরিপাটি থাকবে। কারণ এর মাঝে সে বাথরুমের অনুসাঙ্গিক কাজগুলো সেরে এসেছে। কাপড় পরবার সময় তার বিছানা গোছানো থাকবে। কারণ ঘুম থেকে উঠেই সে বিছানা গুছিয়েছে। একই ভাবে ঘরের জানালা দিয়ে যে রোদ আসছে তা সময়ের সাথে সাথে বেশ খানিকটা পরিবর্তিত হবে। সুতরাং এখানে একই দৃশ্যের অংশ বলে এলোমেলো ভাবে শুটিং করার কোন সুয়োগ নেই। যখন যে সিকোয়েন্সটা ক্যামেরায় ধারণ করা হবে তখন সেই সিকোয়েন্সের মাস্টার, মিড, ক্লোজ, ইনসার্ট যা কিছু লাগে সব এক সাথে ধারণ করে নিয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। না হলে কাহিনির ধারাবাহিকতা বা কন্টিনিউটির ব্যঘাত ঘটতে পারে। সিকোয়েন্স বিষয়টি মূলতঃ সুটিং এবং এডিটিং সংক্রান্ত একটি বিষয়। তাই মঞ্চ নাটকে সিকোয়েন্স বলে কোন কিছু আলাদা করে পাওয়া যায় না।

সিন সম্পর্কে আরো যে কয়েকটি বিষয় না বললেই নয়। অনেক সময় কাহিনির গুরুত্ব অনুযায়ী দেখা যায় একই বাড়ির বিভিণ্ন ঘরের ঘটনাগুলোকে এক একটি দৃশ্য ধরা হয়। অনেকে এই জাতীয় দৃশ্যকে দৃশ্য-১এ, দৃশ্য-১বি এভাবে উপস্থাপন করে। দুটি আলাদা আলাদা লোকেশেনের ঘটনাকেও অনেক সময় ইন্টারকাটের মাধ্যমে এক সাথে দেখানো হয়। যেমন দৃশ্য-১ঃ নায়ক রাস্তায় গুলি খেল। দৃশ্য-২ঃ নায়কের মা বাসায় তরকারী কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলল। এরপরে আবারও আগের দৃশ্যে নায়ক এবার চক্কর মেরে মাটিতে পড়ে গেল। আবার পরের দৃশ্যে মা কাটা আংগুল চেপে ধরে ভাবছে নিশ্চয়ই আমার ছেলে কোন বিপদে পড়েছে। এভাবে টেনশন র্নিমানের জন্যে অনেক সময় দুটি বা তিনটি দৃশের মাঝে ইন্টারকাট করা হয়। সেক্ষেত্রে দৃশ্য-১এ, ১বি, ২এ, ২বি এভাবে ব্যবহার করা হয়।

আশা করছি সিন ও সিকোয়েন্সর মাঝে পার্থক্য ও সর্ম্পক আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৩১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×